বগুড়া, রাশেদুল ইসলাম :
বগুড়া দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলীসহ এক উপপরিদর্শকের বিরুদ্ধে নূর আলম নামের মোটর মেকানিকের কাছে থেকে ঘুষ নেয়া, মারধর ও মামলা দিয়ে হয়রানী করার অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগে নুর আলমের স্ত্রী রাজিয়া সুলতানা সংবাদ সম্মেলন করেন।
এর আগে গত ২৪ সেপ্টেম্বরে জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি ও আইজি বরাবর ওই ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়। এই অভিযোগ দেয়ার পরেই নুর আলমের ওপর মামলা দিয়ে হয়রানী করা শুরু হয় বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান রাজিয়া সুলতানা।
সোমবার (২৫ অক্টোবর) বেলা ১২টার দিকে বগুড়া প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মলেন হয়। এতে রাজিয়া সুলতানা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন।
রাজিয়া সুলতানা বলেন, তার স্বামী নুর আলম পেশায় একজন মোটর মেকানিক। দুঁপচাচিয়া সদরে বাসষ্ট্যান্ডে তিনি কাজ করেন। চলতি বছরের ২৯ আগষ্ট দুঁপচাচিয়া থানার এসআই মোসাদ্দেক নুর আলমকে অভিযোগ আছে বলে থানায় ওসির কাছে নিয়ে যান। সেখানে নুর আলমকে অভিযোগ না বলে গালিগালাজ ও মারধর করেন দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলী। মারধরের একপর্যায়ে তার কাছে ৭০ হাজার টাকা দাবি করেন ওসি। নুর আলম নির্যাতন সইতে না পেরে তার ভাই ফরিদকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে থানায় আসতে বলেন। ফরিদ সেই টাকা নিয়ে এসে ওসিকে দেন। এরপর সেদিন বাকি ২০ হাজার টাকা কয়েকদিন পরে দেয়ার শর্তে ছাড়া পায় নূর আলম। কয়েকদিন পরেই ওসি তার এসআইদের মাধ্যমে বাকি ২০ হাজার টাকা দেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকেন ও পুনরায় থানায় এনে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন।
বারবার ওসির এমন আক্রোশ সইতে না পেরে পরের মাসে ২৪ সেপ্টেম্বর নূর আলম জেলার পুলিশ সুপার, ডিআইজি ও আইজি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
ওসি অভিযোগের বিষয়টি জানতে পেরে নুর আলমকে পুনরায় থানায় ডেকে মাদকসহ বিভিন্ন মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন। তবে নুর আলম অভিযোগ তুলে নেয়নি৷
নুর আলমের স্ত্রী আরও বলেন, এর মধ্যে ১১ অক্টোবর দুপচাঁচিয়া বাসষ্ট্যান্ড এলাকায় মিনি ট্রাক মালিক সমিতির অফিস ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ভাংচুর এবং লুটপাটের একটি মামলা দায়ের হয় থানায়। সেখানে নুর আলম ও তার ভাইদের আসামি করা হয়। মামলার বাদী করা হয় মিনি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলুকে।
মামলাটিতে ১৯ অক্টোবর আদালত নুর আলম ও তার অপর ২ ভাই ফরিদ উদ্দিন, নুরুল ইসলাম বাবুসহ ৫ জনের জামিন না মঞ্জুর করে জেল হাজতে পাঠান।
রাজিয়া সুলতানা অভিযোগ করে বলেন, ১৯ অক্টোবর ওসি হাসান আলী স্থানীয় সালমা বেগম নামের এক নারীকে বাদী করে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করান।
এসব বক্তব্যের শেষে দেশের উর্দ্ধতন মহলসহ পুলিশের আইজি, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি ও বগুড়া পুলিশ সুপার মহোদয়ের সু-দৃষ্টি কামনা করছেন বলে জানান রাজিয়া।
তবে এসব অভিযোগের বিষয়টি পুরোটা সাজানো নাটক বলে জানিয়েছেন দুপচাঁচিয়া থানার ওসি হাসান আলী। তিনি বলেন, বাসস্ট্যান্ডে যে অফিসে হামলার ঘটনা হয়েছে তা নুর আলমেরই চাচাতো ভাইয়ের অফিস। ওই ঘটনা এলাকার সবাই জানে, দেখেছে।
ওসি আরও বলেন, আমি নিজের সম্পর্কে বলব না। দুপচাঁচিয়ার লোকজনের কাছে খোঁজ নিলেই ওই মোটর মেকানিকের সম্পর্কে জানতে পারবেন। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পাবেন। স্থানীয়রা কেউ তাকে ভালো বলবে না।
গত মাসে করা ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগটি তদন্তের দায়িত্বভার রয়েছে দুপচাঁচিয়া-আদমদীঘি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার মো. নাজরান রউফের ওপর। তিনি বলেন, ওসির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত প্রায় শেষের দিকে। খুব দ্রুত পুলিশ সুপারের নিকট তা জমা দেওয়া হবে।

