বগুড়াঃ
বগুড়ার গাবতলীতে সানজিদা খাতুন (৪) নামে এক শিশুকে অপহরণের পর শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় দুই স্কুলছাত্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দেওয়া তথ্যে ওই শিশুর হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বৃহস্পতিবার (১৮ নভেম্বর) সকালে তার মরদেহ শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।
নিহত সানজিদা গাবতলী উপজেলার নেপালতলী ইউনিয়নের লাঠিমার ঘোন উত্তরপাড়া গ্রামের রাজ মিস্ত্রী শাহীন প্রামাণিকের মেয়ে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত দুই কিশোরও একই এলাকার বাসিন্দা।
পুলিশ জানায়, চার বছর বয়সী সানজিদা বুধবার সকালে বাড়ির উঠানে খেলছিল। তবে সকাল ১০টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছিল না। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও সন্ধান না পাওয়ায় অনেকে ধারণা করেন পুকুর বা ডোবার পানিতে সে তলিয়ে গেছে। এজন্য ফায়ার সার্ভিসে খবর দেওয়া হয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাড়ি সংলগ্ন পুকুর ও ডোবায় তল্লাশি চালিয়ে ফিরে যায়।
ওইদিন দুপুরে একটি মোবাইল ফোন থেকে স্থানীয় এক নারী মোবাইল ফোনে কল করে সানজিদাকে অপহরণের কথা জানানো হয়। তাকে পেতে হলে মুক্তিপণ হিসেবে ৩ লাখ টাকা দিতে হবে বলেও জানানো হয়। ওই নারী বিষয়টি নিখোঁজ সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিককে জানায়।
এরপর সানজিদার বাবা সেই মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করলে তার কাছেও মেয়েকে ফিরে পেতে মুক্তিপণের টাকা দাবি করা হয়। তবে কয়েকবার কথা বলার পর অপহরণকারীরা টাকার অঙ্ক কমিয়ে ৫০ হাজার দাবি করে এবং বুধবার রাত ৭টার দিকে সেই টাকা গ্রামের একটি কালভার্টের নিচে রেখে আসতে বলে। পাশাপাশি বিষয়টি পুলিশকে না জানানোর জন্যও হুঁশিয়ার করা হয়।
এরপর সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক পুরো ঘটনাটি গাবতলী থানায় জানালে পুলিশ নির্ধারিত সময়ের আগেই সেই কালভার্টের অদূরে অবস্থান নেয়। রাত ৭টার দিকে এক ব্যক্তিকে ওই কালভার্টের কাছে আলো দিয়ে কিছু খুঁজতে দেখে তারা।
এ সেখানে গিয়ে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়। তার মুখ দেখে নিশ্চিত হওয়া যায় সে একই গ্রামের এক কিশোর। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ী পুলিশ রাত ১১টার দিকে একই গ্রামে আরেক কিশোরের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে একটি স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে নিহত সানজিদার হাত-পা বাঁধা মরদেহ উদ্ধার করে। রাতেই এ কিশোরের আরেক সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়।
গাবতলী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জিয়া লতিফুল বলেন, দুই কিশোর হত্যার দায় স্বীকার করেছ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এক কিশোর জানায় তার খালার বিয়ে উপলক্ষে নতুন জামা-কাপড় কেনার টাকার জন্য সানজিদাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করে। তারা ভারতীয় বেসরকারি টিভি চ্যানেলের (সোনি আট) ক্রাইম পেট্রোল অনুষ্ঠান দেখে অপহরণের কৌশল রপ্ত করে।
ওসি আরও বলেন, এক কিশোর নিজেকে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী দাবি করেছে। আরেক কিশোর বলেছে সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। ওই হত্যার ঘটনায় নিহত সানজিদার বাবা শাহীন প্রামাণিক বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে গাবতলী থানায় একটি মামলা করেছেন। তাদের আদালতে পাঠানো হবে।

