গ্রামের সবচেয়ে প্রবীণ নারী আমেনা খাতুন। বয়সের ভারে হাঁটেন লাঠিতে ভর করে। শরীরের চামড়ায় ভাঁজ পড়েছে, কানেও শোনেন কম, কম দেখেন চোখেও। তিন ছেলে ও দুই মেয়ের মা আমেনা খাতুন। মারা গেছেন দুই ছেলে। জীবিত ছেলের বয়স ৭৫ বছর হলেও মায়ের বয়স জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ৩৩ বছর। এ কারণে ছেলে ইয়াকুব আলী বয়স্কভাতা পেলেও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় পাচ্ছেন না ওই বৃদ্ধা।
আমেনা খাতুন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের দর্জিগাতী গ্রামের মৃত ছমেদ আলীর স্ত্রী। নিজের ঘর না থাকায় নাতির ঘরের এক কোনে তার বসবাস। স্বজনদের দাবি, আমেনার বর্তমান বয়স ১১৯ বছর। অথচ জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স ৩৩ বছর। যে কারণে তিনি পাচ্ছেন না বয়স্কভাতা।
শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের দর্জিগাতী গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, লাঠিতে ভর দিয়ে কুঁজো হয়ে হেঁটে আসছেন আমেনা খাতুন। তিন থেকে চারবার ডাক দিলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। পরে নাতি এসে জানান, তার দাদি কানে কম শোনেন, চোখেও দেখেন কম। যে কারণে তিনি সাড়া দিচ্ছেন না।
আমেনার নাতি শামীম মিয়া বলেন, দাদি আমার ঘরেই বসবাস করেন। আমরা জানি, দাদির বয়স ১১৯ বছর। অথচ, জাতীয় পরিচয়পত্রে দাদির বয়স দেখাচ্ছে ৩৩ বছর। যে কারণে তিনি বয়স্কভাতা পাচ্ছেন না। প্রশাসন যদি দাদির একটা ভাতার কার্ড করে দেয় তাহলে শেষ বয়সে দাদির দিনগুলো ভালো কাটতো।
প্রতিবেশী মাসুদ মিয়া বলেন, উনি আমাদের এলাকার সবচেয়ে প্রবীণ, আমাদের অভিভাবক। অথচ, জাতীয় পরিচয়পত্রের ভুলে উনার বয়স দেখাচ্ছে ৩৩ বছর। বৃদ্ধ বয়সে অভাব অনটনের সংসারে একটি বয়স্কভাতার জন্য বিভিন্ন জনের কাছে যাচ্ছেন। কিন্তু, তার বয়স্কভাতার কার্ড হচ্ছে না। এই বয়সে উনার একটা বয়স্কভাতার কার্ড খুব প্রয়োজন।
এ বিষয়ে ওই বৃদ্ধার ছেলে ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের হিসাব অনুযায়ী মায়ের বয়স ১১৯ বছর। কিন্তু, জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী মায়ের বয়স ৩৩ বছর। আমি তার ছেলে হয়ে বয়স্ক ভাতা পেলেও আমার মা বয়স্কভাতা পাচ্ছে না। আমার এক নাতি জাতীয় পরিচয়পত্রের বয়স ঠিক করতে কাজ করছে।
বৃদ্ধা আমেনা খাতুন বলেন, ‘কাডের লাইগা তারাকান্দা গেছি, মুলাবাড়ি গেছি। মেলা (অনেক) পয়সা খরচ করছি। কাড ভালা না, কাডের মধ্যে বয়স কম। দৌড়াদৌড়ি করছি, পয়সা খরচ করছি, কিন্তু ভাতার কাড অইছে না।’
এ বিষয়ে জানতে গালাগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান তালুকদারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তারাকান্দা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা রুবেল মণ্ডল বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে, জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ৩৩ বছর হলে বয়স্কভাতা দেওয়ার সুযোগ নেই। জাতীয় পরিচয়পত্র দেখার বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচন কর্মকর্তার।
উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ কে এম সাইদুজ্জামান বলেন, আমেনা খাতুনের জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুলের বিষয়টি সম্প্রতি জানার পর সংশোধনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। অচিরেই তা সংশোধন করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজাবে রহমত বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। যেহেতু জানতে পেরেছি নির্বাচন কর্মকর্তা ও সমাজসেবা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি খুব তাড়াতাড়ি সুরাহা করা হবে।

