নেত্রকোনাঃ
প্রতিবন্ধী কার্ড হলেও প্রায় দুই বছর ধরে ভাতা পাননি দিল নাহার (৩০)। ভাতা কোথায় যায়, কার কাছে যায় এ নিয়ে অনেক ঘোরাঘুরি করেও কোনো কুল-কিনারা করতে পারেননি। অবশেষে সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারেন তার ভাতা ঠিকই হচ্ছে। তবে সে ভাতা চলে যায় অন্য একটি মোবাইল নম্বরে। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই নম্বর স্থানীয় ইউপি সদস্যের ভাইয়ের। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সহায়তায় ভাতা ফিরে পান দিল নাহার। প্রায় দুই বছরে ভাতার ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা একত্রে পেয়ে আনন্দে আত্মহারা তিনি।
দিল নাহার নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা উপজেলার চিরাম ইউনিয়নের নৈহাটী গ্রামের আজমল হোসেনের মেয়ে। রবিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ভাতার ১৫ হাজার ৭৫০ টাকা দিল নাহারের হাতে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দিল নাহারের ভাবি শাহানা আক্তার, এলজিইডি সার্ভেয়ার মো. দেলোয়ারসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দিল নাহারের ভাবি শাহানা আক্তার জানান, দিল নাহার বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী। সে কারণে তার বিয়ে হয়নি। ফলে বাবার বাড়িতেই থাকে। দুই বছর আগে তৎকালীন ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলাম দিল নাহারকে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড করে দেন। কিন্তু কোনো ভাতা পায়নি সে।
সম্প্রতি স্থানীয় সমাজসেবা অফিসে গিয়ে জানতে পারি নিয়মিত ভাতা পাচ্ছেন দিল নাহার। তবে সে ভাতা অন্য একটি মোবাইল নম্বরে চলে যাচ্ছে। যাচাই করে দেখা যায় ওই নম্বরটি স্থানীয় ইউপি সদস্য সাইফুল ইসলামের চাচাতো ভাই রহুল আমিনের। পরে এ নিয়ে বৈঠকের পর রহুল আমিন টাকা ফেরত দেন।
এ বিষয়ে আমিন বলেন, আমার নম্বরে কীভাবে টাকা গেছে সেটা জানতাম না। টাকা আমার মোবাইলে গেলেও সেটা তুলতেন অন্য কেউ। সবার সামনে বিগত সময়ে আমার মোবাইলে যাওয়া সমস্ত টাকা ফেরত দিয়েছি।
চিরাম ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) ছন্দু তালুকদার বলেন, এতদিন ভাতার টাকা সাবেক মেম্বারের চাচাতো ভাইয়ের মোবাইলে যায়। এটি ইচ্ছাকৃতভাবেই হয়তো করা হয়েছে। সম্প্রতি এ নিয়ে বৈঠক করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সাবেক ইউপি মেম্বার সাইফুল ইসলাম জানান, প্রতিবন্ধী কার্ড আমার সময়েই করা হয়েছে। তবে সমস্যার বিষয়টি তারা আমাকে জানায়নি। তারা নিজেরা দৌড়ঝাঁপ করেছে। সম্প্রতি জেনেছি দিল নাহারের টাকা অন্য কোথাও চলে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত দুবারে ১১ হাজার টাকা তুলেছে শুনেছি। তবে টাকা দিল নাহারকে দিয়ে দিবে।
বারহাট্টা এলজিইডির সার্ভেয়ার মো. দেলোয়ার বলেন, একজন প্রতিবন্ধী নারী তার ভাতার টাকা ফেরত পেয়েছেন এটা ভেবে ভাল লাগছে। এ ঘটনার আমরা স্বাক্ষী হতে পেরে আনন্দিত। টাকা ফেরত পেতে যারা সহায়তা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানাই।

