ঢাকাFriday , 25 August 2023
  1. Engineering
  2. অপরাধ
  3. অর্থনীতি
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. আবহাওয়া ও দূর্যোগ
  7. ইসলাম
  8. উন্নয়ন
  9. কবিতা
  10. কুরআন/সূরা
  11. কৃষি
  12. কোভিড-১৯
  13. খেলাধুলা
  14. গনমাধ্যম
  15. জব
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আমার আম্মা আমার জীবনে সবকিছু,আমি হয়তো আমার আম্মার থেকে বেশী কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা,

MRM
August 25, 2023 10:30 am
Link Copied!

গল্পঃ
বিয়ের পর বাসর ঘরে বউকে বলা আমার প্রথম কথাটা ছিলো”আমার আম্মা আমার জীবনে সবকিছু, আমি হয়তো আমার আম্মার থেকে বেশী কাউকে ভালোবাসতে পারবোনা, কিন্তু আমি চেষ্টা করবো তোমাকে তোমার জায়গায় সর্বোচ্চ ভালো রাখার, ভালোবাসার, প্লিজ আমার আম্মাকে কোনোদিন কষ্ট দিয়ো না”। আমার মতো এমন ডায়লগ হয়তো বাংলাদেশের বেশীর ভাগ ছেলেরাই দিয়ে থাকে, আমার ব্যাতিক্রম হতে মন চাইলো না।
বউ আমার দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রইলো,কিছু বলল না।

বয়সে ছোট মেয়ে, কষ্ট পেলো নাকি পেলো না ঠিক বুঝলাম না।
আমি বিছানায় বসতেই সে একটু সরে গিয়ে জায়গা করে দিয়ে বলল, আচ্ছা আপনি কবে চলে যাবেন?
আমি একটু অপ্রস্তুত হয়ে বললাম আসছিলাম তো পাচ মাসের ছুটিতে মেয়ে দেখতে দেখতে তো ১ মাস চলে গেলো, বলতে পারো গুনে গুনে চারমাস আছি, এরপর আমি আমতা আমতা করে জিগেস করলাম আমি তোমার নামটা ভুলে গেছি, কি যেনো ডাকনাম তোমার…

আমার নাম রিনি, বলেই খিল খিল করে হাসতে লাগলো, আর বির বির করে বললো আল্লাহ এ কেমন বর বউ এর নাম জানেনা!

সিঙ্গাপুরে থাকার সুবাদে বহু সুন্দরী মেয়ে জীবনে দেখার সুযোগ হয়েছে, কিন্তু খিলখিল করে হাসলে একটা মেয়েকে এতো ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগতে পারে জীবনে প্রথম উপলব্ধি করলাম।হাসতে হাসতে তার চোখে পানি চলে আসছে, সে খুব সাবধানে পানি মুছে আবার হাসছে, আর আমি প্রথমবারের সবচেয়ে সুন্দর হাসির মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলাম।

আমার পুরো জীবন রিনিময় হয়ে গেলো, বয়স কম হলেও প্রচন্ড গুছানো আর মিশুক একটা মেয়ে, পুরো বাড়ির কাজ সে একা হাতে সামলাতে পারতো, আমার মা বোনের আরাম আয়েশের দিন ফিরে এলো, এতে অবশ্য রিনির কোনো আফসোস নেই, আমি যতদিন থাকলাম রিনিকে সাহায্য করলাম। আমার যেদিন ফ্লাইট ছিলো তার তিনদিন আগে থেকে রিনির চোখেমুখে আধার নেমে আসে, আমি টের পাই সে বাথরুমে গিয়ে কাদে, রান্নাঘর, বারান্দায় আড়ালে গিয়ে কাঁদে, আর আমার সামনে স্বাভাবিক হওয়ার ভান করে,আমিও ভান করি।এই যে প্রিয়দের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট প্রতিবার ভোগ করতে করতে আমি ক্লান্ত,মাত্র ইন্টার পাশ করে দেশের বাইরে পাড়ি দিয়েছি জীবিকার তাগিদে,আব্বা মারা যাওয়ার পর ইচ্ছা থাকা সত্বেও আর পড়াশোনা করতে পারিনাই,১৭ টা বছর প্রবাস জীবন কাটিয়েছি এখন আর হাউমাউ করা দুঃখ গায়ে মাখাতে মন চায় না,মনকে পাথর করেছি।তবে এবার আমার পাথুরে মন কেমন গলে যেতে চায়!

সিঙ্গাপুরে আসার পর নিয়মিত ই বাড়িতে কথা হতো, আম্মার সাথে,ছোট বোন রেহানা,আর রিনির সাথেও,এবার মনটা কেমন যেন ছটফটে হয়ে আছে,কাজে মন বসানো দায়,বার বার বাড়ির কথা মনে পড়ে।মাস তিনেক পর খবর পেলাম আমার রিনি মা হচ্ছে, খবরটা পেয়েছি আম্মার কাছে,অনেকবার চেষ্টা করার পর ও রিনির সাথে কথা বলতে পারলাম না সেদিন,সে লজ্জায় আমার সাথে কথা বলতে পারছেনা,আম্মা হেসে কুটিকুটি হয় আর বলে কেমন পোলাপান মানুষ দেখ,দুদিন পর মা হইবো আর এখন এমন করতাছে,আমি শুনি আর হাসি।
আমার ভিতরে আনন্দেরা হৈ-হুল্লোড় করছে, জীবনে আসলে টাকার খুব দরকার, আজকে টাকার টান না থাকলে আমি দৌড়ে দেশে চলে যেতাম, আমার লাজুক বউয়ের লজ্জা ফোনে না ভাঙিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ভাঙাতাম।

একটা সময় ছিলো ছোটপোশাক পড়া বিদেশি সুন্দরীদের উপর চোখ চাইতে না চাইতে চলে যেতো, কিন্তু এদেরকে এখন আমার ফ্যাকাশে লাগে, আমার নিজের ভিতর আমি অন্য আমিকে আবিষ্কার করতে থাকলাম,প্রায়ই খাতা কলম নিয়ে হিসাবে বসি এখন থেকে আরো খরচ কমাতে হবে নিজের, প্রতিদিন অল্প অল্প করে জমাতে থাকলাম। মোটামুটি একটা সেভিংস হলেই দেশে গিয়ে অন্তত একমাস থেকে আসবো।

আমার দুচোখ ভরা রঙিন স্বপ্নের মৃত্যু ঘটলো আমার সন্তান আর রিনির মৃত্যুর সাথে সাথে। সাধারণ বিষয়, আবার সাধারণ না হয়তো, আমার ক্ষুদ্র মস্তিষ্ক যতটুকু বুঝেছে তা হলো, পানি ভেঙে যাওয়ার ফলে এমনটা হয়েছে। নিজেকে বুঝানোর মতো কোনো ভাষা আমার জানা ছিলো না।শুধু যখন চিৎকার করে কানতে মন চাইতো কিন্তু সেটাও পারতাম তখন শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে বললাত,”হে আল্লাহ আমি আপনার ফয়সালা মেনে নিয়েছি,আমার অশান্ত হ্রদয় আপনি শান্ত করে দিন”। প্রচন্ড যন্ত্রনায় আমার দিনগুলো কাটতে লাগলো,উঠতে বসতে সারাখন রিনির কথা কানে বাজে,যে সময়ে সময়ে ও কল দিতো ঐ সময়গুলো মনের অজান্তেই ফোন হাতে নিতাম,কিসের যেনো অপেক্ষা, যেনো শেষ ই হয়না।

তিনমাস পর দেশে গেলাম,স্ত্রী সন্তানের কবর যেয়ারত করাটাই আমার মুখ্য উদ্দেশ্য ছিলো। সারা ঘরময় রিনির বিচরন অনুভব করতে পারি শুধু দুচোখ ভরে দেখতে পাইনা, মাত্র চারমাসের সংসারের সৃতি আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে রেখেছে ।রাতে রিনির ফোনটা ঘাটছিলাম, হঠাৎ তার মেসেঞ্জার চেক করে দেখলাম একটা আইডিতে রিনি অনেক মেসেজ পাঠিয়েছে,ভয়েজ পাঠিয়েছে,কিন্তু ওপাশের কোনো মেসেজ নেই,আইডিটা কার হতে পারে বুঝার উপায় নেই,লক প্রোফাইল।

আমি মেসেজ গুলো পড়তে লাগলাম,আমার মা বোনকে নিয়ে শতশত অভিযোগ, শতশত দুঃখ কষ্টের কথা সে লিখে পাঠিয়েছে,রাগ লাগছে,মনে সন্দেহ উকি দিলো। সে কি কারো সাথে পরোকিয়ায় জরিয়েছিলো! পরদিন সকালে আমি টাকা দিয়ে সে আইডি হ্যাক করাই,লগইন করে বোকা বনে যাই,ফেইক আইডি কোনো ফ্রেন্ড নেই রিনি ছারা,কেউ নেই শূন্য ফাকা আইডি,কোন পোস্ট নেই। লগইন ডিটেইলস চেক করে বুঝলাম এটা রিনির ই আইডি,আর সে তার কষ্ট গুলো আমাকে না বলে এখানে লিখে রেখেছে।
অনেক জানা অজানা সত্য আমি জানতে পারলাম,আমার মা বোনের তার প্রতি অনাদর অবহেলা,সে আমাকে কেনো বলেনি তা আমার বুঝতে বাকি নেই,কতটা অমানবিক আমার মা বোন হতে পারে আমি চিন্তা করতে পারছিনা।
মেয়েটি নিশ্চয়ই ভেবেছিলো সবচেয়ে বেশী ভালোবাসা মানুষের নামে আমার কাছে অভিযোগ করতে নেই কিংবা আমাকে সে কষ্ট দিতে চায় নি।অনুতাপ অনুশোচনা আমাকে ঘিরে ধরলো।
আমি হাসপাতালে গেলাম,যেখানে রিনি মারা গেছে,অনেক কষ্টে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে জানতে পারলাম রূঢ় সত্যটা,রিনিকে প্রথমত দেরীতে হাসপাতালে আনা হয়েছিলো,দ্বিতীয়ত আম্মা আর আমার বোন জোর করে নরমাল ডেলিভারি করাতে চেয়েছিলো, মূলত আম্মাকে রাজি করাতে করাতে আরো অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।খুব বাজে শোনালেও আমার অবচেতন মন আমাকে বারবার বলছে তোর আম্মা তোর বউ বাচ্চার খু*।

বাড়িতে এসে আম্মার রুমে গেলাম,আম্মার সামনে বসে বললাম,আম্মা আমার ছোটবোনটার কেনো যেনো সিজার করছিলো ডাক্তার?
আম্মা পানের বক্সটা খুলতে খুলতে বললো কেন আবার,পানি ভাঙ্গার ডর আছিলো,ডাক্তার ই তো কইলো করতে।আল্লাহ বাচাইছে সময়মতো করা গেছো।

আম্মার উত্তরে আমার কলিজায় আগুন জ্বলে গেলো,যেটা নিজের মেয়ের বেলায় ভাবতে পারছে সেটা রিনির বেলায় পারলোনা?একজন নারী হয়ে অন্য নারীর প্রতি এতোটা অবহেলা?
কোনমতে ধৈর্য ধরে বললাম,আম্মা আমি কি আপনারে কখোনো কষ্ট দিছি?ভালোবাসা কম দিছি?

আম্মা এবার একটু অবাক হয়ে বলল,কেরে বাজান,কি হইসে এডি কস কেরে?

আমি আম্মার হাত ধরে বললাম,আম্মা আপনারে আমি অতি ভালবাসছি তাই জানতে চাই আমার দ্বারা আপনি কষ্ট পাইছেন কিনা?

আম্মা আমার মাথায় হাত বুলায়া বলল,তুই আমার সোনার টুকরা ছেলে।তোরমতো ছেলে আল্লাহ সবার ঘরে ঘরে দেক।

আমি আম্মার আরেকটু কাছে গিয়া বললাম,আম্মা রিনিরে তো আপনি রেহানা দুজনেই পছন্দ করে আনছিলেন,তাইলে ওর সাথে এমন করছেন কেন আম্মা,ওরে ফোনে কথা বলতে দেখলেই এতো ডাকাডাকি কেন করতেন বলেনতো?আট মাসের পোয়াতী মানুষটারে দিয়া কেন ভারী কাজ করাইতেন,খাবার কেন কম দিতেন আম্মা? আমি কি টাকা কম দিতাম? লাগলে আমারে বলতেন, আমি না খাইয়া দিতাম টাকা। আমি তো আল্লাহর ভরসায় আপনার কাছে আমার বউরে রেখে গেছিলাম,আপনি আপনার বিবাহিত মেয়ের দেখভাল করলেন যে শশুড়বাড়িতে না নিজের মায়ের কাছেই থাকে বেশী,কিন্তু আমার এতিম বউটারে দেখলেন না আম্মা?কাজের লোকের মতো তারে দিয়া খাটাইতেন,আগে না হয় নিজের ইচ্ছায় করতো কিন্তু যখন শরীর খারাপ হইলো তখন কেন জোর করলেন আম্মা?

আম্মা আমার হাত ছেড়ে দিয়ে চিতকার করে বলল,মরার আগে এমন মিথ্যাকথা কইয়া গেছে আমার নামে আল্লাহ আমারে তুমি উঠায় নেও।তুমি বিচার করো,কবরে আগুন জ্বলবো!!

আম্মার চিতকারে বোন আর ভাতিজিও ছুটে এলো।

আমি বোনের দিকে তাকিয়ে বললাম,তোর সিজারের টাকা কে দিছিলো? আমি,তোরে অনার্স পাশ কে করাইছে, আমি,তোর জামাইয়ের আবদার কে মেটায়,তোর সংসার কয়দিন পর পর কার টাকায় জোড়া লাগে?,আমার টাকায় তাইলে আমার সংসারটা ভাঙলি কেন বলতে পারবি?

বোন আমার হুংকার ছেড়ে বলল,ও তুমি আমগো বিচার করতে দেশে আইছো,তোমার বউ যে এত কুটনা আগে বুঝিনাই,এতো মিথ্যুক ছি:।

আমি কিছুটা রেগে গিয়ে বললাম,
মিথ্যুক তো তোরা,যতরকমের অমানুষিক নির্যাতন করেছিস,এমনকি তুই তার গায়ে দুইদিন হাত ও তুলেছিস,আমার আম্মা সেটাকে আবার সঠিক রায় দিছে , অথচ সে আমাকে কিচ্ছু বললনা!!

বোন এবার মশকারার সুরে বলল,ও তোমার ভালো বউ কিছু বলেনাই,তাহোলে এগুলো এখন তোমার বউ এর ভুত এসে বলে গেছে?

ইচ্ছে হলো চর মেরে ওর দাতগুলো ভেঙে দেই,ওর বাচ্চাটা সামনে দাড়ানো তাই নেহায়েত ছেড়ে দিলাম। রাগে কিড়মিড় করতে করতে বললাম,নিজে না পড়ে তোকে পড়িয়েছি,তোর উচিত তোর জামাই এর অতিরিক্ত চাহিদা নিজে ইনকাম করে মেটানো,যেহেতু নিজের পছন্দে বিয়ে করেছিস!!

রেহানা,বিলাপের সুরে বলল,নিজের আপন ভাই বোনরে এমন খোটা দিতে পারলো পরের বাড়ির মেয়ের জন্য,এ দিন ও আসলো আমার জীবনে!!

আমি আম্মাকে বললাম,আম্মা আমি তো সিজারের জন্য টাকা দিছিলাম আলাদা করে,তাইলে আপনি করাইতে চান নাই কেন?আপনার আর রেহানার এতো আপত্তি থাকার কি আর কোনো কারন ছিলো?

আম্মা জোর গলায় বললো,কে কইছে আমরা করাই নাই,ডাক্তাররে আমরাই কইছি টাকা যা লাগে লাগুক,অপারেশন করান।হেরা না করলে আমরা কি করমু,হুদাই মিছা দোষ দিবিনা।

আম্মার সহজ সরল মিথ্যা আমার কাছে বিষের মতো লাগছে।আমি দীর্ঘঃশ্বাস ফেলে বললাম আম্মা আমি খবর নিয়া আসছি সিজারের টাকাটা আপনি আপনার মেয়ের জামাইকে দিছেন,তার জমি কেনার টাকা শর্ট পড়ায়,আপনি আপনার মেয়ের সংসার বাচালেন আর আমার সংসারটা ভেঙে দিলেন,আমার মাসুম বাচ্চাটারে মেরে ফেললেন?এ আপনার কেমন বিচার আম্মা?

আম্মা কাঁদোকাঁদো গলায় বলল,হায়াত মৌওত আল্লাহর হাতে তুই আমারে দোষ দিতে পারসনা।

কোথায় যেনো হাদিস টা পড়েছিলাম,”তুমি তোমার বাবা মায়ের সাথে তর্ক করোনা, এমনকি তাদের জুতোর সাথেও না,যদিও বা তুমি সঠিক হও” প্রচন্ড আক্রোশে ফেটে পড়তে ইচ্ছা হওয়া সত্যেও নিজেকে দমালাম,আম্মার দিকে তাকিয়ে শান্ত ভাবে বললাম,আল্লাহ বলছে চেষ্টা করতে আপনি এবং আপনারা করেন নাই,বরং আরো খারাপ করেছেন,তারে তিলে তিলে শারীরিক মানুষিক যন্ত্রনা দিয়ে মারছেন, সে যদি আমাকে নালিশ করতো তাইলো সত্য মিথ্যা মিশানোর সুযোগ ছিলো কিন্তু যে মানুষ নিজের সাথে কথা বলে তার মিথ্যা বলার দরকার হয়না।কথাটা বলেই রুম থেকে চলে আসলাম,অনেক প্রশ্ন অনেক কথা ইচ্ছা থাকা সত্বেও বললাম না।মা বোন বিলাপ করছে,আশেপাশের মানুষ আমাকে বউপাগল নিষ্ঠুরতম সন্তান হিসেবে জানছে,জানুক তাতে আমার আসোলেই আর কোনো আসে যায় না।

ফ্লাইটের আগের দিন,আম্মা আমাকে খেতে ডাকলো,এতোদিন একসাথে না খেলেও আজকে খেলাম,খুব স্বাভাবিক ভাবে আম্মাকে বললাম, আম্মা কোনোদিন তো এয়ারপোর্টে যান নাই,এবার চাইলে যাইতে পারেন।
আমার সহজ স্বাভাবিক কথায় আম্মা খুশি হলেন,আমার দিকে চেয়ারটা একটু টেনে বলল বাবা আর একটা মাস থাক আমি তোর জন্য মেয়ে খুঁজতাছি, চিন্তা করিস না ভালো মেয়েই আনমু,জীবন কি আর এমনে চলবো?
আমি হাসলাম আম্মার দিকে তাকায়া কিছু বললাম না।মনে মনে ভাবলাম আচ্ছা আম্মারা না সব বুঝে,কিছু কিছু আম্মারা কেন বুঝে না সন্তান এর সুখ কিসে?

ইমিগ্রেশন এ ঢুকার আগে আমি আমার আম্মাকে জড়ায়া ধরে কানের কাছে ফিসফিস করে বললাম,আম্মা আপনি আমাকে সন্তানহারা করেছেন,আজকে থেকে আপনিও ছেলে হারা,এটা আপনার প্রতি আমার নিরব প্রতিবাদ আম্মা,আপনাকে যদি আমার বুকের ভেতরের কষ্টটা দেখাতে পারতাম,তাইলে আপনি বুঝতেন আপনার কলিজার টুকরা ছেলেকে নিজ হাতে কতটা কষ্টের সাগরে ফেলে দিয়েছেন ।
আম্মা আতকে উঠলেন,আমার হাত শক্ত করে ধরে বললেন কি বললি তুই?
আমি আম্মার হাত ছাড়িয়ে বোনকে উদ্দ্যেশ করে বললাম,যদি দেখিস কখনো টাকা পাঠানো বন্ধ হয়ে গেছে বুঝবি তোর ভাই মারা গেছে,ততদিন আম্মা বেচে থাকলে আশা করি তুই তার দেখভাল করবি,এছাড়া তোদেরকে টাকার কথা ভাবতে হবেনা কখোনো।

দু”কদম হেটেই পিছনে ফিরে তাকালাম,আমার প্রিয় আম্মা, আমার জন্মদাত্রী হাউমাউ করে কাঁদতেছে,পিছে ফিরে গেলাম আবার আম্মার দুহাতে চুমু খেয়ে বললাম,আম্মা আমি আপনার থেকেও হতভাগা, আপনার সন্তান আপনার থেকে হারিয়ে গিয়েও আপনাকে ভালোবাসবে।আর আমার সন্তান আমাকে চেনার আগে,ছোয়ার আগেই আমার থেকে হারিয়ে গেছে…
আম্মা চিতকার করে মাটিতে বসে পড়লেন,
আমি যথাসম্ভব দ্রুত হাটতে লাগলাম,আর পিছনে ফিরে তাকানো যাবোনা,পিছুটান বড্ড খারাপ জিনিস।

ফ্লাইটে উঠেই প্লে লিস্ট খুজে পুরোনো গানটা খুজে বের করলাম,সময়োপযোগী গান,ছোট বেলায় আব্বা রেডিওতে একটা গান খুব বাজাতো, শিল্পি ইব্রাহীম এর গান,বড় হয়ে ইউটিউব খুজে বের করেছি…
আমি গা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুঝলাম..
অল্প ভলিউমে বাজছে-
“আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি রইলো,চোখের আড়ালে চলে গেলেও আমি মনের আঙিনায় রইবো…আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি রইলো”

চোখ বুজে আমি আমার রিনিকে দেখতে পাই, খিলখিল করে হাসতে থাকা মেয়েটা আজকে হাসছেনা, তার দুচোখ ভরা অভিমান, ভালোবাসার দৌড়ে পিছিয়ে থাকার অভিমান, এ অভিমান ভাঙাবো কেমনে?

সমাপ্ত।

গল্প লেখক: S N Nayeem

 

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।